সিলেটে ১৩ দিন




১ম পর্ব


রসায়ন প্রাইভেট ছিল সেদিন। স্যার না আসাতে পুরো তালে মহিলাদের মতো প্যানপানানি চলছিল। যদিও মহিলাদের মতো অনর্থক কথা হচ্ছিলো না তবুও বলবো স্যারদের ভাষ্যমতে এটা একধরনের মহিলাদের প্যানপানানি। যাইহোক এক পর্যায়ে আমার দুবছর ধরে লালিত স্বপ্নের কথা নাঈমকে জানালাম। যে এবার এসএসসির বন্ধে আমি সিলেট যাবো। একপর্যায়ে নাঈম বললো তারাও নাকি সিলেট যাবে তাদের আন্টির বাসায়। কিন্তু আমি অতোটা কেয়ার করি নি। কিন্তু পরে আবার বিষয়ে কথা তুলে বললো তাদের সাথে সিলেট যাওয়ার জন্য। আমি মৌনসম্মতি দিয়েছিলাম। যাইহোক পরীক্ষা দিলাম ভালোয় ভালোয়। ১২ মার্চ নাঈম বারবার কল দিয়ে বলছিলো যে সে নাকি সিলেটের আন্টিদের বলে রেখেছে। রাত টা পর্যন্তও আমি কনফার্ম ছিলাম না যাবো কি যাবো না?

অবশেষে মন সায় দিল আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তখন ছিলাম গ্রামে, রাত নয়টায় গাড়ি পাওয়াটা দু সাধ্য হলেও আমার সিদ্ধান্তের কাছে গাড়ি হার মেনেছিলো। চলে আসলামথ কিলোমিটার দূর থেকে শহরে। মোটামুটি হালকা কিছু খাবার নাঈমকে সাথে নিয়েই কিনলাম। তারপর রাত এগারোটায় আমি নাঈমদের বাসায়। খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম। সবার আগেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম থেকে উঠে অন্ধকারে চোখ মেলে কালোর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। বেশ কিছুক্ষন পরে আযান হলো। আমিতো আর অপেক্ষা করতে পারি না নাঈমকে ডেকে তুললাম। যদিও ওর ঘুম ভাঙ্গানোর দৃশ্যটা মজারই ছিলো। সম্ভবত আমার আওয়াজ শুনে আন্টিও উঠে পড়লো। সকাল তখন টা বেজে গিয়েছে। আমরা ফজর নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া করে রওনা দিলাম বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড আসার সময় আংকেল আমাদেরকে বাসে উঠিয়ে দিয়ে গেল।

সকালে খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় শুরু হলো পেটে যন্ত্রণা। মনে মনে ভয় হচ্ছিলো না জানি জার্নির আগেই নেমে যেতে হয়। সকাল টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও বাস ছাড়লো ৪৫ মিনিট পরে। এতে বিরক্তিটা ক্রমাগতই বেড়ে গিয়েছিল। অবশেষে বাস ছাড়লো ৪০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে। কবির ভাষায় রূপের রানীকে দেখতে। পথে পথে বাস যাত্রী উঠানোর জন্য থামতো।আর এটাতে চরম বিরক্ত লাগতো। যান্ত্রিক গড় গড় পি পি শব্দের সাথে পাল্লা দিয়ে বাস ছুটলো জাফলং এর দেশে। একলোকের অতিরিক্ত প্রাকৃতিক চাপের কারনে বাস থামলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পরে গিয়ে। বলা হয়নি এতক্ষণ প্রায় ঘন্টারও বেশি সময় ধরে নাঈম তার ইউরিন চেপে রেখেছিলো। যেই না বাস থামালো নাঈম তো পুরাই লাফ। আমার বেশি প্রয়োজন ছিলো না সত্বেও আমিও সেরে আসলাম

পথে যেতে যেতে একটা বই আমার দুই পাকে অধিকার করে রেখেছিলো। মোটামুটি এক দেড় ঘন্টা বইটা পড়েছিলাম। তারপর গাল গল্প করতে করতে এসে পৌছলাম হবিগন্জ। বিশাল হাইওয়ে রেস্তোরাঁ। যদিও ২০১৬ সালে এখানে নামার সুযোগ হয়েছিলো। তখন ছিলো রাত আর এখন দিন। খাবার সাথে করেই নিয়ে আসছিলাম তাই বড়লোকের মতো হোটেলে বসার দুঃসাহস করি নি। কিন্তু হাত মূখ দুয়ে যোহর আসর একসাথে পড়ে নিলাম। কিছু চকলেট, চিপস আর সুইংগাম নিয়ে ফিরে আসলাম বাসে। ইতিমধ্যেই নাঈম ফাহিম খাবার খাচ্ছে। আমিও এসে যোগ দিলাম।

আধাঘন্টা ব্রেক বাস আবারও ছুটে চললো আপন গতিতে। বিকাল তখন তিনটে আমরা এসে পৌছলাম সিলেট শহরে। বিশাল শহর। পূর্বে একদিন ঘুরে গিয়েও ঠাওর করতে পারলাম শহরের এদিক সেদিক। কি আর করা গুগল ম্যাপতো আছেই। গুগল মামা আমাদের জানালো আমরা নাকি সিলেট বাসস্ট্যান্ড আছি।
তাহলে কি নেমে পড়বো?
বাস তো আর যাচ্ছে না?

নাঈমকে বলললাম আন্টিকে ফোন দিতে। আন্টি জানালো বাস নাকি ছাতক শহরের দিকেই যাবে। এতক্ষণে আমরা টেনশন মুক্ত হলাম। আধাঘন্টা বাস থামানোর পরে বাস এবার চললো শিল্পনগরী ছাতকের উদ্দেশ্য। কিন্তু ঘটনা ঘটলো আরেকটা!
আমারতো পেটে কামড়!
জুতা কই?
আমার প্রায় তিন হাজার টাকা দামের ক্যাচ একটা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার আশেপাশে দু তিন চেয়ারের নিচেও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে একটু সামনে গেলাম। দেখি আমার জুতা আমার সাথে রাগ করে সামনে চলে গিয়েছে।
জুতা উদ্ধার সম্পূর্ণ হলো। এবার একটাই ভাবনা কখন পৌছবো?

যেতে যেতে কত কি অবলোকন। সূর্যের ঝলকানি,মাশরুম চাষ আরো কত কি?
অবশেষে এসে পৌছলাম নির্দিষ্ট গন্তব্য। আমাদের রিসিভ করতে এলো অমি ভাই। সাদা চামড়ার খাটি সিলোঠি পোয়া সে,, সিএনজি করে আমরা বাড়িতে পৌছলাম।,,,,

চলবে,,,,


Comments

  1. ভালোই লিখেছেন।চালিয়ে যান

    ReplyDelete
  2. আপনি এই বয়সে যা না করছেন??. সেরা সেরা, অনেক এগিয়ে আপনি

    ReplyDelete
  3. শুভ কামনা, দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।

    অসাধারণ...💜💜

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বাগদাদের সেই পাগল বহলুল

কে ছিলেন শেখ এদেবালি রহঃ

শৈশবের কিছু কথা