কে ছিলেন শেখ এদেবালি রহঃ


যারা অটোম্যান সম্রাজ্যের নাম শুনেছেন এবং সুলতান উসমান গাজীর পরিচয় জেনেছেন তারা নিশ্চয়ই শেখ এদেবালির নামটাও শুনে থাকবেন। আজকে বলছি শেখ এদেবালির পরিচয় সম্পর্কে কিছু কথা।

শেখ এদেবালির পরিচয়ঃ (জন্মঃ১২০৬)

শেখ এদেবালি রহঃ ছিলেন একজন তুর্কী সূফী। যিনি বালিয়াহ নামেও পরিচিত। যিনি ছিলেন উসমানীয় সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা উসমান গাজীর বাবা আরতুগ্রুল গাজীর বন্ধু এবং উসমান গাজীর সহধর্মিণী রাবেয়া বালা হাতুনের পিতা। অর্ঘুজ বংশধরদের মধ্যে তিনি ছিলেন খুব প্রভাবশালী একজন সূফী।

শেখ এদেবালি আরবের বনু তামিম গোত্রের একটি বংশধর (আরবি: بنو تميم) এবং আল খাতার(আরবি: خاطر) বংশের লোক ছিলেন । এবং সেই যুগের মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় মহলে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন ।

শেখ এদেবালি রহঃ ও আরতুগ্রুল গাজীঃ

শেখ এদেবালি রহঃ এর সাথে আরতুগ্রুল গাজীর অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। আরতুগ্রুল গাজী শেখ এদেবালিকে অনেক শ্রদ্ধা করতো। তিনি ছিলেন সে সময়ের একজন বিজ্ঞ আলেম। আরতুগ্রুল গাজী প্রায় সময়ই শেখ এদেবালির কাছে বিভিন্ন পরামর্শ করতে যেতেন। মুসলিম বিশ্বের অবস্থা সম্পর্কেও তারা পরামর্শ  করতেন।  হতেএছাড়াও আরতুগ্রুল গাজী পুত্র উসমান গাজীকে দ্বীনি ও রূহানী তরবিয়তের জন্য শায়েখ এদেবআলীর নিকট রেখে আসার সময় নসিহত করেছিলেন:
"হে পুত্র! কখনো তোমার শায়েখকে অসন্তুষ্ট করবেনা এবং তার আদেশ অমান্য করবে না" !
যা এখনো আরতুগ্রুল গাজীর কবরের পাশে একটি নেমপ্লেটে লেখা রয়েছে ।

উসমান গাজীর সাথে এদেবালির সম্পর্কঃ

শেখ এদেবালি রহঃ ছিলেন উসমান গাজীর শ্বশুর। এবং তিনি ছিলেন উসমান গাজীর একজন উপদেষ্টা। তিনি উসমান গাজীর বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে একটি গাজী তলোয়ার উসমানকে উপহার হিসেবে দেন। কথিত আছে ঐ তলোয়ারটি খলিফাতুল মুসলিমিন হযরত উসমান রাঃ এর তলোয়ার। যা উসমান গাজী তার প্রতিটি যুদ্ধেই ব্যবহার করতেন। উসমান গাজী বালা হাতুনকে বিয়ের আগেও প্রায় সময় এদেবালির বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন। এবং উসমান গাজী এদেবালি রহঃকে অনেক সম্মান করতেন।


উসমান গাজীর স্বপ্ন ও এদেবালি রহঃ



কথিত আছে যে এক রাতে উসমান গাজী এদিবালির দরগাতে অবস্থান করার সময় দেখা স্বপ্ন পরের দিন তিনি এদিবালিকে জানান। তিনি বলেন, "আমার শাইখ, স্বপ্নে আমি আপনাকে দেখেছি। একটি চাঁদ আপনার বুকে দেখা দিয়েছে। এটি উঠতে থাকে এবং আমার বুকে এসে অবতীর্ণ হয়। আমার নাভি থেকে একটি গাছ উঠে। এটি বৃদ্ধি পায় এবং শাখাপ্রশাখা এত বেশি হয় যে এর ছায়া পুরো পৃথিবীকে আবৃত করে ফেলে। এই স্বপ্নের অর্থ কী??”

কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর এদিবালি ব্যাখ্যা দেন:

“অভিনন্দন উসমান! সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমার এবং তোমার বংশধরদেরকে সার্বভৌমত্ব প্রদান করেছেন। আমার কন্যা তোমার স্ত্রী হবে এবং সমগ্র বিশ্ব তোমার সন্তানদের নিরাপত্তাধীন হবে।”

উসমানের স্বপ্ন উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থানে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। উসমানীয় পণ্ডিতদের কাছে এই স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক উপাদান ছিল।

উসমানের প্রতি এদেবালির নসীহতঃ

হে আমার পুত্র! এখন তুমি বে!

এখন থেকে, ক্রোধ আমাদের জন্য; আপনার জন্য শান্তি!

আমাদের জন্য অসন্তুষ্ট হওয়া; আপনার জন্য দয়া করা !

আমাদের জন্য অভিযুক্ত করা; আপনার জন্য সহ্য করা !

আমাদের জন্য, অসহায়তা এবং ত্রুটি; আপনার জন্য সহনশীলতা!

আমাদের জন্য ঝগড়া; আপনার জন্য, ন্যায়বিচার!

আমাদের জন্য হিংসা, গুজব, অপবাদ; আপনার জন্য, ক্ষমা!

•হে আমার পুত্র!

এখন থেকে আমাদের ভাগ করে নেওয়া; আপনার জন্য ঐক্যবদ্ধ করা ।

আমাদের জন্য, অলসতা; আপনার জন্য সতর্কতা এবং উৎসাহ!

•হে আমার পুত্র!

ধৈর্য ধরুন, সময়ের আগে ফুল ফোটে না। কখনই ভুলে যাবেন না: আপনার পরবর্তী বংশধর বিকাশ লাভ করবে, এবং রাষ্ট্রটিও সমৃদ্ধ হবে!

•হে আমার পুত্র!

আপনার বোঝা ভারী, আপনার কাজ কঠিন, আপনার শক্তি একটি চুল উপর ঝুলছে! আল্লাহ আপনার সহায়ক সহায় হোক !

এদেবালির রহঃ এর বংশধরঃ

তার দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে ছিলো। ছেলেরা হচ্ছেন মাহমুদ ও মেহমেদ। এবং মেয়েরা হচ্ছেন রাবেয়া বালা হাতুন ও মালাহুন হাতুন।
তার নাতি ছিলেন সুলতান ওরহান গাজী।

মৃত্যুঃ তিনি ১৩২৬ সালে ১২০ বছর বয়সে তুরস্কের বেলিচিক শহরে মৃত্যুবরন করেন।


তথ্য সূত্রঃ ইংরেজি উইকিপিডিয়া  

Comments

  1. উসমানের শশুড় তো অন্য একজনও ছিলো,,

    ReplyDelete
  2. Ter mane Malhun hatun ar Bala hatun ake oporer bon. R tader husband akzon e !!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বাগদাদের সেই পাগল বহলুল

শৈশবের কিছু কথা